সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজির উৎস নিয়ে কমিটি অনুমোদনের নাটক!

লেখক: আমাদের সংগ্রাম ডেস্ক
প্রকাশ: ২ years ago

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ডটি দীর্ঘদিন থেকে চাঁদাবাজির উৎস স্থল হিসেবেই পরিচিত। সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেন অপরাধ জগতের এ সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

সাত খুনের ঘটনায় নুর হোসেন কারাগারে থাকলেও থেমে নেই এর চাঁদাবাজি। এরপর থেকে এর নিয়ন্ত্রন নিতে একাধিক সংঘর্ষ, হামলা মামলার ঘটনা ঘটেছে।

এর আধিপত্য ধরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন একাধিক সিন্ডিকেট। ক্ষমতাশীল দলের ছত্রছায়ায় থেকে তারা নামে বেনামে ওই সিন্ডিকেটের মূলহোতা সেজে জিম্মি করে রেখেছে গাড়ির মালিকদের।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে রেন্ট-এ-কার এর ব্যবসা পরিচালনার নামে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তলন হচ্ছে। আর নিজেদের গাড়ি ভাড়ায় চালাতে বাধ্য হয়েই গাড়ির মালিকগন চাঁদাবাজদের চাঁদা দিচ্ছে। চাঁদার টাকা পুলিশ, ট্রাফিক ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে বর্তমান রেন্ট-এ-কার পরিচলনা কমিটি নিয়ে উঠেছে নানা বিতর্ক। পূর্বের কমিটি বহাল থাকার পরও ক্ষমতাশীল দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে আরেকটি পরিচালনা কমিটি গঠন করে রেন্ট-এ-কার দখলে নেয় বর্তমান কমিটির জসিম, ফারুক ও খোরশেদ। এনিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পূর্বের কমিটির অভিযোগ তারা ক্ষমতাশীল দলের হলেও বর্তমানে অবৈধ এই কমিটির নেতৃবৃন্দ পুলিশ ও দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের অনৈতিকভাবে ম্যানেজ করে এই স্ট্যান্ডটি পরিচালনা করছে। যাদেরর কমিটি বৈধ তারা স্ট্যান্ড থেকে বিতাড়িত।

এদিকে বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. জসিম উদ্দিন, মো. ফারুক হোসেন ও খোরশেদ আলম। তারা নিজদের এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। তাদের নেতৃত্ব নিয়েও গাড়ির মালিকদের রয়েছে নানা ক্ষোভ।

গাড়ির মালিকরা নাম না প্রকাশের শর্তে বলছেন, এর আগের কমিটি তাদের জন্য মঙ্গল ছিলো। যদিও সবাই চাঁদা তুলতো। কিন্তু তারা গাড়ির মালিকদের কল্যানে কাজ করতো।
তাদের অভিযোগ পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত না করে বর্তমানে নতুন করে একটি প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদনের জন্য জোর সুপারিশ করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মো. ইয়াসিন মিয়া। তাদের প্রশ্ন ওই দুই নেতা কার কাছে জোর সুপারিশ করেছেন অনুমোদন দেয়ার জন্য। অদ্যবদি পর্যন্ত কেউ এ কমিটির অনুমোদন দেয়নি। অথচ যাদের গাড়ি, যারা মালিক কেউ এ বিষয়ে অবগত নন। কার অনুমোদনে মো. জসিম উদ্দিন, মো. ফারুক হোসেন ও খোরশেদ আলমের কমিটি তাদের বৈধ দাবি করে।

অপরদিকে থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তারা কিভাবে চাঁদাবাজদের অবৈধ কর্মকান্ড ও তাদের বৈধতা দিয়ে নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির সাথে প্রায় সময়ই দেখা যায় তাদের ঘনিষ্ঠতা। একটি ইফতার মাহফিলেও দেখা যায় সস্মুখ সারিতে পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছাকাছি অথচ অনেক সিনিয়র ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবহেলিত ছিলো ওই অনুষ্ঠানে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ওই দুই নেতার জোর সুপারিশের সাক্ষর করা প্রস্তাবিত কমিটির একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এই কমিটির মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের ৬ জন শীর্ষ নেতাকে উপদেষ্টা করে ১৫ সদস্যের একটি প্রস্তাবিত কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির সদস্যদের মধ্যে দু’জনের নাম পাওয়া যায়নি। তবে ওই প্রস্তাবিত কমিটিতে সাক্ষর করে জোর সুপারিশ করেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার জোর সুপারিশ করা ওই কমিটির কপি সাক্ষর করে রিসিভ করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিমরাইল মোড়ে অবৈধ রেন্ট-এ কারের ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে মহাসড়কে পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালি জায়গাতে। একসময় এ জায়গাটিতে জলাশয় ছিল। সাত খুনের ঘটনায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর হোসেন জোর করে কাউকে তোয়াক্কা না করেই এ জায়গাটিতে বালু ভরাট করে। বালু ভরাটের পর সেখানে নুর হোসেন ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন ধরনের গাড়ির একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে যার নাম দেয়া হয় রেন্ট-এ কার। সেই থেকেই এ রেন্ট-এ কার ষ্ট্যান্ডে ভর্তি বাবদ মোটা অংকের এককালীন অর্থ আদায়সহ প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসিক চাঁদা আদায় চলছে।

বর্তমানে রেন্ট-এ কার থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন চাঁদাবাজ জসিম ফারুক গং। শিমরাইল মোড় এলাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গাড়ির চালকরা ফারুককে চাঁদাবাজ ও থানা পুলিশের সোর্স হিসেবেই চিনেন। রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে তাশ, লুডু থেকে শুরু করে আইপিএল ক্রিকেট জুয়া খেলা হয়। লেনদেন হয় মোটা অংকের টাকা।

অভিযোগ রয়েছে এই রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের গাড়ি দিয়ে মাদক পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনশৃক্সখলা বাহিনীর হাতে এ স্ট্যান্ডের একাধিক গাড়ি মাদকসহ আটক হয়েছে। জানা গেছে এই রেন্ট-এ কারের কিছু গাড়ি চলছে অনিয়মিত নামসর্বস্থ দৈনিক পত্রিকা ও অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগিয়ে। যার শেল্টার দিয়ে থাকেন চাঁদাবাজ ফারুক। বিভিন্ন অপরাধীরা মিডিয়া স্টিকার লাগানো এসব গাড়ি ভাড়া নিয়ে চালকদের ম্যানেজ করে ছিনতাই ও মাদক পাচার করছে । বর্তমান কমিটি ও প্রস্তাবিত কমিটিকে ঘিরে শিমরাইল মোড় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংঙ্কা করছেন গাড়ির চালক ও হেলপাররা। স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রন নিয়ে ইতি পূর্বে একাধিকবার দুই গ্রæপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তার পরও স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ স্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।

বর্তমানে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস প্রতি মাসে ৯০০ টাকা এবং হায়ে· গাড়ি প্রতি ১ হাজার ৩০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা নিচ্ছেন প্রস্তাবিত কমিটির নেতারা। পরিসংখ্যান মতে দুই শতাধিক গাড়ি থেকে মাসে দুই লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
তবে প্রশাসনকে ম্যানেজের দায়িত্ব নিয়েছেন চাঁদাবাজ ফারুক। তবে এই চাঁদাবাজির

  • সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজির উৎস নিয়ে কমিটি অনুমোদন নাটক