কাঁদি ভরা খেজুর গাছে/পাকা খেজুর দোলে/ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই/মামার দেশে চলে। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার এ লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যে কোনো গ্রামে গেলে। উপজেলার, এসবিকে ইউনিয়ন, ফতেপুর ইউনিয়ন, পান্তাপাড়া ইউনিয়ন, স্বরুপপুর ইউনিয়ন, শ্যামকুড় ইউনিয়ন, নেপা ইউনিয়ন, কাজিরবেড় ইউনিয়ন, বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন, যাদবপুর ইউনিয়ন, নাটিমা ইউনিয়ন, মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়ন, আজমপুর ইউনিয়ন,
এই এলাকা গুলোতে গেলে দেখা মিলবে সারি সারি খেজুর গাছে কাঁচাপাকা খেজুর দোলার দৃশ্য।
প্রাচীনতম ফলের মধ্যে অন্যতম এ দেশি খেজুর স্বাদ অনন্য হওয়ায় গাছে ফল পাকলেই কিশোরদের দুরন্তপনার বেড়ে যায়।
উপজেলার সেজিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদ আলী বলেন, মহেশপুরে ঐতিহ্যগত ভাবেই খেজুরের গাছ বেশি। ফলনও ভালো। আমাদের উপজেলায় সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ আছে। এসব গাছে এবার ফলও ধরেছে প্রচুর।
মাইলবাড়ীয়া ঢাকাপাড়া গ্রামের কিশোর মনিরুল বলেন, খেজুর গাছে উঠে খেজুর খেতে খুব ভালো লাগে।
এছাড়া পেকে তলায় পড়ে থাকা খেজুর দল বেধে কুড়ানোর মজাই আলাদা। মাইলবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক আফাজউদ্দীন জানালেন, আগে এই উপজেলায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিলো। এখন অনেক এলাকায় খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। ইটভাটায় জ্বালানির হিসেবে ব্যবহারের ফলে এখন খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে।
তিনি জানান, যেসব খেজুর গাছ আছে, তাতে এ বছর প্রচুর ফল ধরেছে। যা ইতোমধ্যে পাকতে শুরু করেছে। অনেকে গ্রাম থেকে খেজুর নিয়ে শহরের বাজারে বিক্রি করতেও শুরু করেছেন।
সাধারণত খেজুর গাছ কেউ রোপন করেন না। মানুষ ও পাখ-পাখিরা খেজুর খেয়ে মাটিতে বীজ ফেললে সেটা থেকে গাছের জন্ম হয়, জানান তিনি।
বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সংবাদকর্মী এম এ সাগর বললেন, খেজুর গাছ যে কেবল ফল দেয় তা কিন্তু নয়। শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়া যায়। যা দিয়ে গুড় তৈরি হয়। খেজুরের রসও কিন্তু সবাই পছন্দ করে। খেজুর রস ও গুড়ের তৈরি পিঠাতো বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। খেজুর গাছের পাতা দিয়ে পাটি ও কাঁচা ঘরের বেড়া তৈরি করা হয়। এছাড়া খেজুর পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সুধী মহল জানান, আগে এ এলাকায় আরও বেশি খেজুর গাছ ছিলো। নানা কারণে খেজুর গাছ কমে গেছে। ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস, খেজুর গুড় কিংবা খেজুর পেতে হলে প্রতি বছর বৃক্ষরোপনের সময় খেজুর গাছ রোপন করা হলে তা বৃদ্ধি পাবে।
খেজুরের পুষ্টিগুণ বিষয়ে জানতে চাইলে এক ডাক্তার বলেন, খেজুর আরবদের প্রধান ফল। এ খেজুরেরই একটা জাত জন্মে আমাদের দেশে, যার ফল আমরা খাই। এ দেশি খেজুরের রঙ হলুদ থেকে খয়েরি বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
ঋতু পরিবর্তনের সময় যেসব রোগ হয় সেগুলো প্রতিরোধে দেশি ফল খাওয়া প্রয়োজন। মৌসুমি ফল মৌসুমি রোগ প্রতিরোধ করে। দেশি ফলের পুষ্টি বেশি। সেজন্য দেশি খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।