খাগড়াছড়িতে বারোমাসি সিম চাষ,তরুণ উদ্যোক্তাদের বাজিমাত

লেখক: আব্দুর রহিম, খাগড়াছড়ি:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

পার্বত্য খাগড়াছড়ি, নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেশে উঠে চোখ জুড়ানো সবুজ আর নয়নাভিরাম পাহাড়চুড়া, অসংখ্য ঝিরি- ঝরনা, পাহাড়ি বাঁক আর সবুজ বনে পাখ-পাখালির মধুর গুঞ্জন আর পাহাড় চুঁড়ায় মেঘের আলিঙ্গন। এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
কিন্তু স্বর্গের মাঝেও যে নরকের যন্ত্রনা থাকে তা খুব কাছ থেকে না দেখলে বুঝা দায়। বছরের পর বছর এই পাহাড়ি স্বর্গেও চরম দারিদ্রতা আর বেকারত্বের অভিশাপে নরকের যন্ত্রনা ভোগ করে আসছিল এই অঞ্চলের শতশত বেকার যুবক।
এই পাহাড়ি অঞ্চলে অসংখ্য বেকার, হতাশায় নিমজ্জিত তরুনের মাঝে আলোর সঞ্চার করেছে বারিমাসি সিম, যা অনেকের কাছে অটো সিম নামেও পরিচিত।
অসময়ে ফলন, উচ্চ বাজার মূল্যের কারনে এই অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই সিম চাষ। তরুন বেকার জনগোষ্ঠিই হচ্ছে এই চাষের মূল উদ্যোক্তা।
বারোমাসি সিম বা অটো সিম, যা লতা জাতীয় ফাবাসিয়া শ্রেনিভূক্ত। দেখতে সবুজ, মোটা, ভারি ও মাংসাল, চেপ্টা, নরম ও সুস্বাদু হওয়ায় এই সিমের বাজার চাহিদাও ব্যাপক। হেক্টর প্রতি উদপাদন প্রায় ১৮-২০টন। বছরের প্রায় ৭-৮ মাস এই সিম বাজারে রাজত্ব করে। যার দরুন এই অঞ্চলের তরুন উদ্যোক্তাদের চাষের প্রথম পছন্দে স্থান করে নিয়েছে এই সিম।
খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার তরুন সিম চাষি মো.আকবর হোসেন(৪০) বলেন তার জীবনের গল্প, কি করে বদলে গেছে তাঁর অভিশপ্ত বেকার জীবন। কোন আয় ইনকাম না থাকায় মা-বাবা ছেলে-মেয়ে নিয়ে যখন দু’চোখে সুধুই আঁধার দেখছিলাম, ঠিক তখনই মা-বাবা অপদার্থ বলে বউ ছেলে-মেয়েসহ বের করে দেয় বাড়ি থেকে। যেন সেদিন আকাশটায় ভেঙ্গে পড়েছিল আমার মাথায়, কোন উপায় না পেয়ে ধরনা দিই এলাকার সমবয়সি বন্ধুবান্ধবের কাছে। যারা ছিল এই অটো সিম বা বারো মাসি সিম চাষি। তাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে ধার দেনা করে মাত্র ৮০টি মাদা দিয়ে ১০শতক জমিতে শুরু করি এই সিম চাষ। ব্যাপক ফলন আর উচ্চ বাজার মূল্যই আলাদিনের চেরাগের মতই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয় আমার। যেই সিম সিজনে ১০টাকা বিক্রি করাও সম্ভব হয়না সেই সিম অসময়ে হওয়াতে ১৫০-২০০টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করি। প্রথম বছরই ধারদেনা কেটে মাথা গুজার জন্য ছোট্ট একটা ঘরও তৈরি করেছি। বড় ছেলেটাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছি। এবছর আগের চেয়ে বাড়িয়ে ২০শতক জায়গায় প্রায় ২শত মাদা করেছি। আশা করি আমাকে আর পিছে ফিরতে হবেনা। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেহেতু এই সিম অসময়ে হয় তাই এতে প্রচুর পোকা মাকড়ের আক্রমন থাকে। যার দরুন অনেক বেশি কিটনাশক ও জৈব এবং রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়, আবার শুকনো মৌসুমের ফসল হওয়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হয়। পাহাড়ি এলাকায় পানি সেচ দেয়াটা ভিষন কষ্ট সাধ্য ও ব্যায়বহুল। যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। যদি তরণরা, উপযুক্ত পরামর্শ, এবং কীটনাশক, সার ও সেঁচের জন্য সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা পাই তবে এই সিম পাহাড়ে নিরব বিপ্লব ঘটাবে বলে মনে করেন তিনি।
এই গল্প শুধু আকবরের একার নয় এই অঞ্চলের অনেক বেকার তরুণের। বারোমাসি সিমচাষে বদলে যাওয়া জীবনের গল্প।
কথা হয় গুইমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস’র সাথে, তিনি বলেন পাহাড়ে দিনদিন এই বারোমাসি শিম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এবং এই অঞ্চলের তরুণ কৃষকদের জীবনমান বদলে দিচ্ছে এই শিম। গ্রীষ্মকালিন শিম বিধায় এতে প্রচুর পোকা মাকড়ের আক্রমন হয়, উৎপাদন খরচও অনেক বেশি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা এই সকল তরুণ উদ্যোক্তাদের কোন ধরণের সার বা কীটনাষক দিয়ে সহযোগিতা করতে পারছিনা। কারণ এই সকল চাষের উপর আমাদের কোন প্রকল্প নেই। তবে আমি আশাবাদি অচিরেই হয়তো আমরা তাদের জন্য কোন প্রকল্প পাবো।
  • খাগড়াছড়িতে বারোমাসি সিম চাষ
  • তরুণ উদ্যোক্তাদের বাজিমাত